Monday, October 22, 2007

দাদার বিপ্লব ও গঙ্গার রুচিকর হাওয়ায় নতুনদার ক্ষুধার উদ্রেক হওয়া

দাদা নামে পরিচিত সিরাজুল আলম খানের নাম আবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে শোনা যাচ্ছে। তা ভালো। যতোসব ঘুণে-ধরা বাতিল মালামাল আমাদের রাজনীতি ও শাসনক্ষমতার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে এবং কালক্রমে অধিষ্ঠিত হবে, তাতে নতুনত্ব কিছু নেই।

বছর দুয়েক আগে একটি উপন্যাস লিখেছিলাম। তার প্রধান চরিত্রের দিনলিপি বা আত্মকথনমূলক অংশ থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করি :

"১৯৭২ সালে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরে গেছে, আমাদের তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো নিজেদের সংগঠিত থাকার, শত শত বছরের দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে এই ভূখণ্ডের মানুষের সম্মিলিত শক্তির আরেকটি উৎসার। অথচ মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম একটি বিশাল ও উন্মত্ত বিভাজন - মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দলটি বিভক্ত হয় রাতারাতি। পরবর্তী মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিরোধীপক্ষের কথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আন্দোলন পর্বতপ্রমাণ এক বিভ্রান্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়।

কিন্তু উপলব্ধিটি ঘটার আগেই হাজার হাজার তীক্ষ্নধী ও মেধাবী যুবক এই বিভ্রান্তির শিকার হয়ে প্রাণ দেয়, জীবিতদেরও অনেকের আর কোনোদিন স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি। সেই বিপ্লবের স্বপ্নটি ব্যর্থতা ও ভুলের কালিমায় লিপ্ত হয়ে গেলে আমার বাল্যকালের বন্ধু টিপু বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায়। মিঠু এখন শুনেছি চায়ের দোকানে দিনমান বসে যে কোনো ইচ্ছুক শ্রোতাকে আসন্ন বিপ্লবের গল্প শোনায় আজও, শ্রোতা কেউ না থাকলেও সে অবিরাম একই কথা একা একা বলে যায়। হয়তো তা-ও একপ্রকার ভালোই, সুস্থ মস্তিষ্কে থাকলে আজ তাদের হয়তো বিশ্বায়ন ও একক বিশ্বের জয়গান করতে হতো।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নেতৃস্থানীয়দের একজন বিপ্লবের পথ পরিত্যাজ্য বিবেচনা করে অবিলম্বে মাথায় টুপি ধারণ করে বাকি জীবন ধর্মীয় রাজনীতি করেন। আরেকজন, যিনি একাত্তরে মার্চ মাসের দুই তারিখে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের কলাভবনে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন, কালক্রমে বিশ্ববেহায়া নামে খ্যাত এক সামরিক শাসকের আয়োজিত জাতীয় সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে খ্যাতি পান। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা সেই হাতটি উত্তোলিত করেন সামরিক একনায়কের সমর্থনে। আরেকজন, যিনি একাত্তরের মার্চে পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন, একাত্তরের রাজাকারের সহকর্মী হিসেবে আজ ক্ষমতাসীন মন্ত্রী এবং মেয়ের বিয়েতে কোটি টাকা ব্যয় করে কাগজের সংবাদ হন।

বিপ্লবের কাহিনী বলা তাদের বন্ধ হয়েছে সেই কবে, সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতনের অনেক বছর আগেই, স্বপ্নেও আর সমাজতন্ত্র বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। একবার এই বিভ্রান্ত ও ভুল বিপ্লবের স্বপ্ন দেখানোর নেপথ্য নায়ক, যিনি বাংলাদেশের রাজনীতির কাপালিক নামে ব্যাপক পরিচিত এবং যিনি সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকাকে এখন বসবাসের যথাযোগ্য স্থান বিবেচনা করেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো। বগুড়ার টিপু এবং মিঠুকে তিনি স্মরণ করতে পারেন এবং তাদের উন্মাদ হয়ে যাওয়ার সংবাদ তাঁর হা হা হাসির উদ্রেক ঘটায়!

No comments: