Sunday, October 21, 2007

আরিফ জেবতিকের "ছেলেবেলা" প্রকল্প এবং আমার ছেলেবেলা

আমার স্ত্রীর কথা যদি বিশ্বাস করেন তাহলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ায় : যে কোনো কাজের কথা বললেই আমার অনিবার্য প্রশ্ন, এক্ষুণি করতে হবে?

তার ধারণা, আমার চেয়ে অলস মানুষ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি কখনো জন্মায়নি। আমি অবশ্য দ্বিমত পোষণ করি। একমত হলে একসঙ্গে এতোকাল আছি কী করে সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

ঠিক দ্বিমতও নই, কিঞ্চিৎ সংশোধনীসহ একমত আর কি! আমার ধারণা, আমি লেখালেখি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে অলস নই। লেখালেখির বাসনা নিয়ে কমপিউটারে বসি প্রতিদিন। কর্মধারার বিবরণ এরকম : প্রথমে একটু ইমেলগুলো দেখা যাক, আচ্ছা দুয়েকটা ইমেলের উত্তরও তো দেওয়া দরকার। তা-ও হলো। এখন আজকের ঢাকার কাগজগুলো একটু দেখি, দেশে কী হচ্ছে না জানলে চলে? গেলো আরো ঘণ্টাখানেক। এখন তাহলে লিখি? নাঃ, তার আগে ব্লগে যাই, কে কী লিখলো, আমার শেষ লেখায় কী মন্তব্য পড়লো দেখবো না? সেসব মন্তব্যে পাল্টা কিছু বলাও দরকার, নিদেনপক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। অন্যদের নতুন লেখাও পড়া কর্তব্য, সঙ্গে মন্তব্য। আঃ, এই তো বেশ। কে বলে আমি লেখালেখি করি না? ব্লগে মন্তব্য লেখা কী লেখা নয়?

এই করে করে কয়েকদিন আগে শুরু করা লেখাটি খুলি। তখন মনে পড়ে, আরে কাল ভোরে উঠতে হবে না? ঘুমাতে যাওয়া দরকার। নাহলে অফিসে বসে ঝিমাতে হবে। সুতরাং লেখার চেয়ে নিদ্রা (আলস্য)উত্তম।
এইরকম যখন আমার লেখালেখির অভ্যাস, তখন আচমকা আরিফ জেবতিকের "ছেলেবেলা" প্রকল্পে সম্ভাব্য লেখকদের তালিকায় নিজের নাম দেখে আতংকিত হই (কিছু আনন্দিতও যে হইনি, তা অস্বীকার করি কী করে?)। তা এই তালিকাভুক্তির খবর জানলাম সমন জারি হওয়ার তিনদিন পরে। নির্ধারিত দশ দিনের আর সাতদিন বাকি। "সন্ত্রাসী সম্পাদকের কাছে নিবেদন" শিরোনামে ইমেল করে অতিরিক্ত কিছু সময় মঞ্জুর করানো গেলো।

মুশকিল বাধলো লিখতে গিয়ে। আমি কী জানতাম আমার ছেলেবেলার গল্প এতো দীর্ঘ? এতো ঘটনা, এতো চরিত্র, এতো বিচিত্র সব গল্প। কোনোটা বাদ দিতে ইচ্ছে করে না, কারণ ভালোমন্দ সবগুলিই আমার কাছে সমান প্রিয়। খেলনার দোকানে দিশেহারা বালকের মতো অবস্থা আমার।

তিন পাতা পর্যন্তু লিখে বুঝলাম মহাসমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছি আমি। এই উপলব্ধি হলে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। সাঁতার দেওয়া বৃথা জেনে গা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে।

সেপ্টেম্বরের পঁচিশ আসতে বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। হবে কী? নাকি হবে না? সেটাই এখন আমার কাছে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।

-------------------------------
সচলায়তন / ২০০৭-০৯-১৭
-------------------------------

No comments: