ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ক্লাসে তাঁর ইংরেজি বক্তৃতা শুনতাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো। সেই তাঁকেই আবার বিভিন্ন সভায় সেমিনারে শুনতাম বিশুদ্ধ বাংলায় বক্তৃতা করছেন। একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে। সৈয়দ শামসুল হককেও যতোটুকু শুনেছি, তিনিও ইংরেজি-বাংলার মিশেল করেন না।
কর্মস্থলে যে বিভাগে আমি কাজ করি সেখানে কর্মীর সংখ্যা প্রায় শ'দেড়েক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এর মধ্যে শতকরা ৬০-৬৫ জন ভারতীয়। এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় তামিল, তেলেগু, গুজরাতি এইসব ভাষা ব্যবহার করে। আশ্চর্য হয়ে দেখেছি, এরা কথা বলার সময় একটিও ইংরেজি শব্দ বলে না।
সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া অঞ্চলে কর্মোপলক্ষে কিছুকাল ছিলাম, সেখানেও চিনারা বা মালেরা ইংরেজি শব্দ ছাড়াই দিব্যি নিজেদের ভাষায় কথা বলে।
আমরা পারি না। আমরা দশটি শব্দের একটি বাক্যে গড়ে ২-৩টি ইংরেজি শব্দ অবধারিতভাবে ঢুকিয়ে দিই। অথচ অনেক বিদেশী একবর্ণ বাংলা না জেনেও শুধুমাত্র ঐ ইংরেজি শব্দগুলোর কারণে আমাদের কথাবার্তার সারাংশ দিব্যি বুঝে ফেলে।
ঔপনিবেশিক শাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, সেটি খোঁড়া অজুহাত। সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া-ভারতও বৃটিশ শাসনের অধীনে ছিলো। আমরা কী এক বিচিত্র কারণে ইংরেজি বিদ্যা ফলানোকে এক ধরনের আভিজাত্যই হয়তো ভাবি। এর কারণ অনুসন্ধান অবশ্য আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়।
বাংলা ভাষাপ্রেম যদি থাকে, আমাদের দরকার মুখের কথায় এবং লেখালেখিতে যতোটা সম্ভব বাংলা ব্যবহার করতে চেষ্টা করা এবং অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি পরিহার করা। আমি কিন্তু ইংরেজি-বিদ্বেষী নই। ব্যবহারিক জীবনে কিছু কিছু বিদেশী শব্দ আমাদের ভাষার অংশ হয়ে গেছে। যেমন এখন আমি চেয়ার না বলে যদি কেদারা বলতে যাই তা খুবই হাস্যকর হয়ে যাবে। টেবিল শব্দের বাংলা আছে বলে আমার জানা নেই। ফোন? দূরালাপনী শব্দটা চালু করার চেষ্টা মনে হয় হয়েছিলো, উচ্চারণ-বান্ধব নয় বলে কাজে লাগেনি। তবে মোবাইল ফোনের বিকল্প হিসেবে নির্মলেন্দু গুণের উদ্ভাবিত মুঠোফোন চমৎকার। সত্যজিৎ রায় dictionary শব্দের বাংলা করেছিলেন 'দেখাশোনারি', impossible-কে করেছিলেন 'আম পচে বেল'! চলে কিন্তু।
সচলায়তন কিন্তু কয়েকটা চমৎকার কমপিউটার-ব্যবহার্য বাংলা শব্দ তৈরি করেছে। যেমন, homepage-কে 'নীড়পাতা', chatroom হয়েছে 'আড্ডাঘর'।
আমার বিশ্বাস সচলের সকল সদস্য অন্তত একটি করে এরকম ব্যবহারিক প্রতিশব্দ তৈরি করতে পারবেন। কয়েক মিনিট সময় খরচ করে একটি প্রতিশব্দ এখানে রেখে যান, একটি ভাণ্ডার তৈরি হোক। আমাদেরই কাজে লাগবে, আমার ভাষা সমৃদ্ধ হবে। শুধু লক্ষ্য রাখবেন আপনার বাংলা করা শব্দটি যেন উচ্চারণ-বান্ধব হয়। ভবিষ্যতে আপনার উদ্ভাবিত শব্দটির জন্যেই হয়তো আপনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, কে জানে!
-------------------
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮
-------------------
Sunday, May 4, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment