ঢাকা থেকে এক লেখক বন্ধু ফোনে বললো, দোস্ত, এবারে ঈদ সংখ্যার জন্যে গোটাচারেক উপন্যাস লিখে পাঠা, ছাপার দায়িত্ব আমার।
আমি বলি, পাগল নাকি? বড়োজোর একটা লেখার চেষ্টা করতে পারি।
আমার এই বন্ধু লেখার জন্যে চার হাত-পায়ের সবগুলিই ব্যবহার করে, নাহলে এতো বিস্তর লেখা তার পক্ষে সম্ভব কী করে বুঝে পাই না। চাইলেই মাসখানেকেরর মধ্যে চার-পাঁচটা উপন্যাস আমার পক্ষে লেখা সম্ভব, এই আস্থার জবাবে তাকে আস্তে করে বলি, দোস্ত, আমি তো তুই না!
এই ঘটনা ২০০৪ সালের। কষ্টেশিষ্টে একটা লেখা দাঁড় করানো গেলো। প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হচ্ছিলো, লেখার আকার যেন খুব বড়ো না হয়ে যায়। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, বেশি বড়ো হয়ে গেলে পত্রিকাওয়ালারা ছাপতে চায় না। বিজয়ের ১৪ পয়েন্ট সুতন্বী ফন্টে লেখাটা শেষ হলো ৬৭ পাতায়। যথাসময়ে পাঠানো হলো। ছাপা হলো সাপ্তাহিক ২০০০-এ। না, যেহেতু বড়ো লেখক নই, লেখাটি মূল ঈদ সংখ্যায় জায়গা পায়নি। ঐ পত্রিকা যে বাচ্চা ঈদোত্তর সংখ্যা বের করে ‘ঈদ সংখ্যা ২’ নামে, সেখানে ছাপা হয়েছে। তবু তো হলো!
মুদ্রিত পত্রিকার কপি হাতে এলে উল্টেপাল্টে দেখলাম। ধ্রুব এষ-এর ইলাস্ট্রেশন ভালো লাগলো। নিজের লেখা ছাপা হওয়ার পর পড়ার উৎসাহ এমনিতেই হয় না, তখন অন্য ব্যস্ততাও ছিলো বলে খুব একটা মনোযোগ দেওয়া হয়নি। একদিন পত্রিকার ঐ সংখ্যাটির পাতা ওল্টাতে গিয়ে চোখ আটকে গেলো এক জায়গায় – একটি পরিচ্ছেদ দেখছি মোট আট-দশ লাইনের। এতো ছোটো কোনো পরিচ্ছেদ লিখেছি বলে মনে পড়ে না তো! এখন আর না পড়ে উপায় নেই।
সংক্ষেপে বলি সেই হতভাগ্য লেখার পরিণতি। কোনোরকম যুক্তি-টুক্তির বালাই নেই, যত্রতত্র লাইনের পর লাইন নেই হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বাক্য বা ঘটনার পরম্পরা খোঁজার চেষ্টা বৃথা। পুরো লেখাটি মিলিয়ে দেখা গেলো, ৬৭ পাতার মধ্যে ১৮ পাতা স্রেফ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশই নেই। যে উপন্যাসের নাম ‘পৌরুষ’ তার এক-চতুর্থাংশ ছেঁটে দিলে আর কী থাকে – এই ধরনের রসিকতা করে সান্ত্বনা পাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই তখন।
বন্ধু খোঁজ করে সাপ্তাহিক ২০০০-এর একটা কৈফিয়ত আদায় করে আনলো যার সারকথা হলো, প্রুফ রীডাররা নাকি এইসব কাটাকুটি করেছে।
বটে! পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব এখন তাহলে প্রুফ রীডারদের হাতে চলে গেছে! প্রুফ রীডাররা সম্পাদক হতে পারবেন না এমন কোনো কথা নেই। বাংলাদেশেই প্রুফ রীডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হওয়া এবং প্রেস ইনসটিটিউটের মহাপরিচালক হওয়ার দুটি ঘটনা আমাদের জানা আছে। কিন্তু সম্পাদকের বর্তমানে প্রুফ রীডাররা সম্পাদনার কাজ করছেন, ভাবা যায়!
আসলে বাজে অজুহাত, দোষ প্রুফ রীডারদের নয়। মন খারাপ করা ছাড়া আর কী করা যায়!
এই লেখাটি নিয়ে যা ঘটেছে তার সঙ্গে সম্পাদনারও কোনো সম্পর্ক নেই। আমার লেখার একটি শব্দ বা বাক্যও পরিবর্তন করা হয়নি। বিষয়টি স্থান সংকুলানের। যখন একটি ঈদ সংখ্যায় ১৫/১৬টি 'সম্পূর্ণ উপন্যাস'-এর জায়গা করতে হয়, তখন সব লেখাগুলিকে দরকারমতো 'সাইজ' না করে উপায় থাকে না। আমার লেখাটিকে 'বরাদ্দ' করা নির্দিষ্টসংখ্যক পাতায় আঁটাতে গিয়ে কেটেছেঁটে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আমিই একমাত্র নই, আরো অনেকের বেলায় একই ঘটনা ঘটেছে।
গত বছর এপ্রিলে, ব্লগিং-এ তখন আমি নতুন, সামহোয়্যারে লেখালেখি করি, হঠাৎ মনে হলো ব্লগে উপন্যাসটা ধারাবাহিক পোস্ট করলে কেমন হয়? দুয়েকজনকে দেখেছি ধারাবাহিক উপন্যাস শুরু করেছেন, দু’তিন পর্বের পর তা আর এগোয়নি। আমার সে ভয় নেই, পুরোটাই তৈরি আছে। ব্লগে বেশি বড়ো লেখা পড়ার ধৈর্য কারো নেই, সুতরাং ৮০০ থেকে ৯০০ শব্দের ছোটো ছোটো কিস্তিতে ভাগ করা গেলো। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় দুটি করে কিস্তি পোস্ট দিয়ে মোট ৩৮ কিস্তিতে শেষ হয়েছিলো। সঠিক জানা নেই, তবে পুরনো ও অভিজ্ঞ দুয়েকজন ব্লগার জানিয়েছিলেন, বাংলা ব্লগে এটাই সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ হওয়া উপন্যাস।
লেখাটিতে সম্প্রসারণের প্রয়োজন এবং জায়গা দুই-ই ছিলো, এখনো আছে। ব্লগে পোস্ট করার উদ্দেশ্য ছিলো, পাঠক-প্রতিক্রিয়া যাচাই করা। মুদ্রিত পত্রিকার লেখা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানার আশা করা মরুভূমিতে তুষারপাতের আশা করার মতোই অলীক কল্পনা। মনে হলো, পাঠক-প্রতিক্রিয়া কিছু পেলে লেখার সংশোধনের সময় কাজে লাগবে। সে উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়নি। যদিও সংশোধন-পরিবর্ধনের কাজ এখনো বকেয়া।
লেখাটি সম্পর্কে একটি মন্তব্য (হয়তো অভিযোগও) এসেছে যে, উপন্যাসের নারী চরিত্রটির ওপরে খানিকটা অবিচার করা হয়েছে, তাকে সবকিছুর জন্যে দোষী করে পুরুষ চরিত্রটিকে সাধূপুরুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই অভিযোগ আংশিক সত্যি। তার কারণও অবশ্য লেখার নামকরণেই পাওয়া যাচ্ছে – লেখাটি পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা, যদিও পুরুষ-চরিত্রের ভালোমন্দ, যুক্তি ও যুক্তিহীনতা, পৌরুষের অহং-এর ভঙ্গুরতা – এইসবই তুলে আনার চেষ্টা করেছি। অন্তত সেটাই উদ্দেশ্য ছিলো।
Tuesday, June 17, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment