Saturday, June 14, 2008

যাচ্চলে!

সকালে হঠাৎই মনে এলো, যাচ্চলে!

আজ জুনের তেরো তারিখ, ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ। ১৩ যে অশুভ সংখ্যা বা সেই তারিখ শুক্রবারে পড়লে তা বহুগুণ বেশি অশুভ ও ভয়ংকর – এইসব বিশ্বাস আমার আদৌ নেই। বিশ্বাস থাক বা না থাক, যথাসময়ে ও কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে এই বহু-প্রচলিত ধারণা বা বিশ্বাসগুলি মনে আসবে না, এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্ধকার রাতে হঠাৎ একটি কালো বিড়াল দেখলে কেউ খুশি হয়? একা একটি শালিককে দেখলে কি কিছু একটা মনে হয় না? দুটি শালিকে আবার অন্যরকম হয়ে যায়!

আমি জানি, শিরোনামে ব্যবহার করা শব্দ বা প্রকাশভঙ্গিটি বাংলাদেশে প্রচলিত নয়। পশ্চিমবঙ্গে খুব-একটা-ক্ষতি-নেই-তবে-হলে-ভালো-হতো ধরনের মৃদু আক্ষেপ বা হতাশার অনুভূতি প্রকাশে ব্যাপক চালু।

তবু আজ সকালে আমার ‘যাচ্চলে’ বলতে ইচ্ছে করলো জুনের ১০ তারিখটা ভুলে গেলাম বলে। গত বছর ঐ তারিখে আমার সচলে আসা। তখনো সচলায়তনের আনুষ্ঠানিক উন্মোচন হয়নি, হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। নিজেকে সেই দলে অন্তর্ভুক্ত দেখে খুশি হয়েছিলাম, সম্মানিতও বটে। সেই হিসেবে আমি প্রাচীনতম সচলদের একজন।

কয়েক সপ্তাহ আগে ঠিক করে রেখেছিলাম, গত এক বছরের সচল নিয়ে আমার কথাগুলি লিখবো। অথচ দিনটা কীভাবে কখন এলো-গেলো, টেরও পেলাম না। মনে পড়লো তিনদিন পরে, টিউবলাইট আর কাকে বলে!

একেবারে গোড়া থেকে আমি সচলে যুক্ত ছিলাম না, এর পরিকল্পনা-প্রস্তুতি সম্পর্কেও কিছু জানতাম না। জেনেছি পরে, অরূপের স্বপ্নের শুরু যেভাবে পোস্ট থেকে। ব্লগে আমার লেখালেখির শুরু ২০০৭-এর জানুয়ারিতে, যখন ব্লগ সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই ভাসা-ভাসা (এখনো খুব বেশি জানি-বুঝি, তা বলা কঠিন)। প্ল্যাটফরম সেই সময়ের একমাত্র বাংলা ব্লগিং কমিউনিটি সামহোয়্যারইন। জুনের প্রথমদিকে একদিন সেখানে দেখি অরূপ একটা পোস্ট দিয়ে আমাকে এমএসএনে ডাকছে। মন্তব্য করে জানাতে হলো, তখন আমি কর্মক্ষেত্রে, সম্ভব নয় (সেখানে ইন্টারনেটে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু চ্যাট-ইমেল ব্লক করা)। আরিফ জেবতিকের ইমেল-আমন্ত্রণও এলো। ১০ তারিখে আমি সচলায়তনের সদস্য।

এসে দেখি, এখানকার সবাই আমার পূর্ব-পরিচিত। ভার্চুয়াল পরিচয় আর কি। কাউকে চাক্ষুষ দেখিনি, ফোনে কথা বলাও নয়। তবু অপরিচিত নন কেউ, তাঁদের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়ে গেছে আগের ছয় মাসে। হয়তো আমাকেও সেভাবেই কিঞ্চিৎ চিনে নিয়েছিলেন তাঁরাও।

এক বছরে সচলায়তনের পরিধি বেড়েছে অনেক, নতুন নতুন লেখক এসেছেন, আসছেন এবং আরো আসবেন। আমার অনুমান, বয়সের হিসেবে আমি বোধহয় জ্যেষ্ঠতম সদস্য এখানে। তরুণতর এবং তরুণতমদের লেখা পড়ি, তাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচয় হয়। অনেকের লেখা পড়ে রীতিমতো মুগ্ধ ও চমৎকৃত হই। এটা আমার একটা বড়ো প্রাপ্তি।

বর্তমান সচলদের মধ্যে সর্বার্থে আমার পূর্ব-পরিচিত পরে আসা রহমান ব্রাদার্সের তিনজন – লুৎফর রহমান রিটন, মাহবুবুর রহমান জালাল ও আরশাদ রহমান (দীর্ঘদিন অনুপস্থিত সে)। গত এক বছরে মাত্র আর একজনের সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের চাক্ষুষ দেখা হয়েছে, তার নাম সুবিনয় মুস্তফী, গত মার্চে তার ডালাস সফরের সময়। ফোন-ইমেল-চ্যাটে এবং সচলের ব্যক্তিগত মেসেজে হিমু, মাহবুব মুর্শেদ, অরূপ, ইশতিয়াক রউফ, আনোয়ার সাদাত শিমুল, কনফুসিয়াস, নজমুল আলবাব এবং এরকম আরো অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। অথচ ভার্চুয়াল সম্পর্কের বিচারে কাউকে অচেনা লাগে না। পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এই ভার্চুয়াল বন্ধুদের (কনিষ্ঠ হলেও তাদের বন্ধু ভাবি) কারণে মনে হয়, যেখানেই যাই না কেন, একজন বন্ধুকে সেখানে পাওয়া যাবেই। সবখানেই আমার ঠাঁই আছে।

No comments: