সকালের কফিসহ কমপিউটারে বসেই খবরটা দেখলাম। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, সেটি কিনে নিয়েছে আরেকটি কোম্পানি। এদেশে এরকম হরহামেশাই হয়। বড়ো মাছ ছোটো মাছকে গিলে খায়, তাতে নতুনত্ব কিছু নেই।
গত মাসকয়েক ধরে অফিসে এইসব নিয়ে নানারকম গুজগুজ, ফিসফাস এবং সশব্দ জল্পনা চলছিলো, শেয়ার মার্কেটে কোম্পানির স্টক দ্রুত পড়ে যাচ্ছে, কোম্পানি টিকবে কি না, ব্যাংকরাপটসি করবে কি না - এইসব। কিছু লে-অফ হলো, কয়েকজন দ্রুত অন্যত্র কাজ নিয়ে চলে গেলো।
আজ অফিসে এসে দেখি, ফিসফাস আর নেই, জোর আলোচনা। অনেকে উদ্বিগ্ন। এই ধরনের মার্জারের ফলে অবধারিতভাবে কিছু কর্মী উদ্বৃত্ত হয়ে পড়ে পদ-পদবীর ডুপ্লিকেশনের কারণে। আরো ঘটে আইটি-ঘটিত এলাকায়, বিশেষত যখন দুই মিলিত প্রতিষ্ঠানের আইটি সংস্কৃতি (সিস্টেমস ইত্যাদি) ভিন্নমুখী হয়। অসম সংস্কৃতির বিবাহের মতো।
অফিসে কেউ কেউ দেখলাম রীতিমতো চিন্তিত, যত্রতত্র জটলা করে আলোচনা চলছে।
আমার বোধহয় বোধবুদ্ধি একটু ভোঁতা ধরনের। এইসব আমাকে স্পর্শ করে না, আমি নিশ্চিন্ত মনে ব্লগ পড়ছি, লিখছি। একজন এসে জিজ্ঞেস করলো, তোমার চিন্তা হচ্ছে না?
বললাম, চিন্তা করে করবো কি? যা হচ্ছে বা হবে তার ওপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সুতরাং ভেবে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আমার রেজু্যমেটি আপডেট করে প্রস্তুত থাকা ছাড়া আর তো কিছু করণীয় দেখছি না।
উদ্বিগ্ন সহকর্মী কোনো সান্ত্বনা পায় না।
গত বছর আমার বন্ধু পীযূষ এলো ঢাকা থেকে, তাকে নিয়ে যাচ্ছি হিউস্টনে। পথে ছোটোখাটো একটা দুর্ঘটনায় পড়ি, গাড়ির সামনের বাম্পার গেলো। পরে পীযূষ জানালো, ধাক্কা লাগার পরে তুমি যেভাবে নিশ্চিন্তমনে গাড়ি থেকে নামলে যেন এসব তোমার প্রতিদিনের ঘটনা!
আসলে তা নয়। আমি চিন্তা এবং দুশ্চিন্তাকে পরিষ্কার দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। মানুষ হিসেবে চিন্তাশক্তি আছে, তার চর্চা করবো। কিন্তু দুশ্চিন্তায় কার কি উপকার হয় আমি জানি না। দুশ্চিন্তা কোনো সমাধান দেয় না, বরং চিন্তাশক্তিকে ধোঁয়াচ্ছন্ন করে, শরীরে তার প্রভাব পড়ে।
পরপর পাঁচবার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বিয়র্ন বর্গ খ্যাত হয়েছিলেন আইসবার্গ নামে। একেকটি ম্যাচ শেষ করার পর নাকি তাঁর পালস রেট থাকতো মিনিটে পঞ্চাশের নিচে। আমার স্ত্রীও আমাকে সেই গোত্রের একজন মনে করে।
Saturday, January 12, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment