Wednesday, November 14, 2007

হেলথ রিপোর্ট, মেয়ের হাতে

মেয়ে তার ইংরেজি ক্লাসে রচনা লিখে ১০০-তে ১০০ পেয়েছে। সগর্বে সে মাকে দেখায়, বাবাকে নয়। কারণ রচনাটি তার বাবাকে নিয়ে। মেয়ের মা গোপনীয়তা রক্ষায় খুব পটু বা ইচ্ছুক নয় বলে একসময় প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

বঙ্গানুবাদে মার খাওয়ার সম্ভাবনা, তাই মূল ইংরেজিতেই রচনাটি উদ্ধৃত করা গেলো:

Iris Zubair
English 1301
10/23/2007

The Sound of Solace

I lay awake in the midst of the night, frustrated and at my wits end with the booming sound of my father coughing in the adjacent room. I listen to him struggle to regain his breath as the coughs get more frequent and violent. I am aware that I should be feeling sympathy for him, maybe even getting him a glass of water and a cough drop. Instead, I cannot help feeling utterly annoyed. It is 4 o’clock in the morning and I only have three more hours of imperative sleep before I have to wake up for school. I feel my anger rising as I think of all the nights he has kept my mother and I awake with his incessant coughing, failing to realize that he is depriving us of our much needed rest. The only person that seems capable of sleeping through the thunderous sounds of my father’s cough is my 10-year-old brother, who ironically crashes in the same room as him. It must be a guy thing.

My father has been smoking cigarettes for over thirty-five years. He started when he was around the age of seventeen, smoking packs with his friends in Bangladesh. Given my father’s niche for writing, I have always liked to think that cigarettes have added to the allure of his artistic persona. I remember looking at an old black and white photograph taken of him in Singapore right after he and my mother were married. In it, he is sitting at his desk with an expression of extreme focus on his face, busy on his typewriter with a cigarette carelessly held in his right hand. His face is that of a twenty-five-year-old. The fine lines, the dark bags under his eyes, and the gray hairs sprouting from his temples have yet to show themselves. His hair is as unruly as it is long, making him seem as if he is putting forth a half-ass attempt at being George Harrison. The smoke from the tip of the cigarette floats and swirls and gets lost among the rays of sunlight illuminating his face. I can always look at that photograph and believe without a doubt, that my father was the epitome of cool.

The coughing began about three years ago and has gradually getting worse. The sound of my father’s coughing has become so implanted in my memory that I cannot remember what it was like to not hear it. Although the evidence of his illness lies within the sound of his raspy breathing and in the echoes of his booming convulsions, he is relentless in keeping his medical information private. Whenever he does visit the doctor, the prognosis is always lost on us as he remains withdrawn so as not to cause us distress. But isn’t confusion in the midst of a catastrophe more distressing than being informed of it? However, I gave up all hope of convincing my father of anything when I was very young. I used to beg him to stop smoking when I was six years old, even going so far as to cut deals with him. I agreed to stop asking for new Barbie dolls if he agreed to throw away his pack. But even a promise to his daughter couldn’t keep him from cigarettes. I held up my end of the bargain and bit my tongue from asking for a new doll, but I remember watching him put on his shoes and open the door to the backyard with a cigarette ready in his hand. “You said you’d stop,” I inquired. He could only smile and say, “Okay, I’ll stop when you stop liking chocolate.” I understood my father was telling me he would never stop smoking and this only enraged me further. The idea of my father putting his addiction before the wishes of his family made me resent him in a way that I never had before.

As I am writing this paper, I can hear my father in a fit of coughing while he is sleeping in the next room. I listen to him gasping for air and I feel like somebody is beating his chest with a hammer while another person is choking him, wrapping their hands tighter and tighter around his neck. He continues struggling to keep himself contained so as not to wake up my brother. But as I stated before, my brother never wakes up at my father’s coughing. Turning off my stereo, I listen as the silence of our house is broken by the jarring sounds of my father struggling to regain a normal breathing pattern and suddenly, I realize exactly why my brother is able to sleep through this. I understand that this haunting cough gives my brother a feeling of safety, of comfort, of reassurance that our father is still here. This sound, the one that usually causes tension and anger and annoyance and worry, is the same sound that is now providing me with the relief of knowing that my dad is alive and even when he is gasping for air, at least he is still breathing. I listen intently as he finally regains his composure and begins to breathe fluidly again, at least for now.

Maybe the very least is all I will ever receive from my father. He has shown the very least of promises, the very least of explanations, and the very least of reassurances. But as I sit here in the deafening silence after this latest episode, I listen to the sounds of my father breathing heavily and slightly wheezing. I can’t help but feel grateful. It is through gratitude that I have come to accept that the very least of him is enough.

Monday, November 12, 2007

‌‌‌প্রলয়ের একরাত্রি : ‘ঘুমো বাছা ঘুমো রে / সাগর দিলো চুমো রে...’




১৯৭০ সাল। আর মাসখানেক পর পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। ৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ২৩ বছরে এই দ্বিতীয়বার। আগের বছর প্রবল গণঅভ্যুত্থানে লৌহমানব বলে কথিত আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের জগদ্দল ভেসে গেছে খড়কুটোর মতো। এই বিজয়ের জন্যে মূল্য অবশ্য কম দিতে হয়নি পূর্ব বাংলাকে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নির্দয় প্রহার, টিয়ারগ্যাস, গুলি সবই বিপুল পরিমাণে জুটেছিলো। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে এই নির্বাচন। স্পষ্ট মনে আছে, আসন্ন এই নির্বাচনটিকে অনেকে বাঙালির অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে নিয়েছিলেন। তাদের দূরদর্শিতা প্রমাণিত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। তা অন্য প্রসঙ্গ।

এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং উপলক্ষ করে যখন সারা দেশ জেগে উঠেছে, তখন এসেছিলো এক মরণ ছোবল। এই ভূখণ্ডের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় সমগ্র সমুদ্র-উপকূলে হারিকেন ও প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে মাত্র এক রাতে কয়েক লক্ষ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঘরবাড়ি, গবাদি পশু কিছুই রক্ষা পায়নি। তারিখ ১২ নভেম্বর। ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশিত হতেও সময় লেগেছিলো। যখন জানা গেলো যে মৃত মানুষের সংখ্যা বারো লক্ষ (মতান্তরে দশ লক্ষ), তখন পৃথিবী থমকে যাওয়ার অনুভূতি হওয়াই স্বাভাবিক।

প্রকৃতির আঘাত যখন আচমকা আসে তখন মানুষ সত্যিই অসহায়। কিছু সতর্কতা হয়তো সম্ভব, তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছু কমে। কিন্তু ১২ নভেম্বরের ওই দুর্যোগের আভাস খুব সামান্যই জানা গিয়েছিলো। পরে প্রকাশিত হলো এই অবিশ্বাস্য তথ্য যে এই ঝড় সম্পর্কে তথ্য থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার তা আমলে নেয়নি, যথাসময়ে সতর্কতাও আসেনি। ঝড়ের পূর্বাভাস ছিলো, তার ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুমাত্র আভাসও ছিলো না। ফলে এই অঞ্চলের মানুষ যারা এইসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেচে থাকে তারা এই পূর্বাভাস নিয়ে আলাদা করে মাথা ঘামায়নি। অনিবার্য ফল হিসেবে কয়েক লক্ষ মানুষ নেই হয়ে গেলো একরাত্রির ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে। এই সেদিনের হারিকেন কাটরিনার তুলনায় সে দুর্যোগ কিছুমাত্র খাটো ছিলো না।

এই বিপুল প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরেও পাকিস্তানী শাসকদের ত‌‌‌‌ৎপরতা খুব বেশি দৃশ্যমান হয়নি, তা ত্রাণে, না সহানুভূতিতে। আরো একবার বোঝা গিয়েছিলো পূর্ব বাংলা ঠিক পাকিস্তান নয়।

আমাদের বাড়িতে তখন দৈনিক পূর্বদেশ রাখা হতো। এই কাগজটি এই দুর্যোগের অসাধারণ কাভারেজ করেছিলো মনে আছে। বিশাল ব্যানার হেডিং করেছিলো : ‘কাঁদো বাংলার মানুষ কাঁদো’ এবং সেদিন কাগজের প্রথম পাতার মাস্টহেড নামিয়ে দেয় একেবারে তলায়। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এই ঘটনা আমার জানামতে ওই একবারই ঘটেছিলো।

তখন কেন্দ্রীয় সরকারে ছয়জন বাঙালি মন্ত্রী ছিলেন। একদিন প্রথম পাতায় পাশাপাশি তাঁদের ছোটো ছবি ছাপা হলো, তার নিচে জনসভায় বক্তৃতারত ভাসানীর বিশাল ছবি, তাঁর উদ্যত তর্জনী ওই ছবিগুলোকে নির্দেশ করছে। সঙ্গে হেডিং : ‘ওরা কেউ আসেনি’।

মনে পড়ে গেলো এইসব কথা। আসলে ভোলা তো হয় না। এই কাগজগুলি আমাদের বাড়িতে এখনো সযত্নে রক্ষিত আছে। হাজার হাজার মাইলের ব্যবধানে না থাকলে এগুলি স্ক্যান করে তুলে দেওয়া যেতো। তা তো আর হওয়ার নয়, পরবাস যাপনের মাশুল।

পূর্বদেশ-এ দিনের পর দিন ওই দুর্যোগে নিহত মানুষের, গবাদি পশুর পড়ে থাকা লাশের ছবি ছাপা হয়েছে। একদা কোলাহলময়, এখন বিরান সব জনপদের ছবি দেখে মন ভারি হয়ে ওঠে। একদিন এরকম কিছু ছবির সঙ্গে রফিকুল হক লিখলেন একটি অবিস্মরণীয় ছড়া :

ছেলে ঘুমলো বুড়ো ঘুমলো ভোলাদ্বীপের চরে
জেগে থাকা মানুষগুলো মাতম শুধু করে
ঘুমো বাছা ঘুমো রে
সাগর দিলো চুমো রে
খিদে ফুরোলো জ্বালা জুড়লো কান্না কেন ছি
বাংলাদেশের মানুষ বুকে পাষাণ বেঁধেছি।

Friday, November 2, 2007

হিরোশিমার সেই অ্যাটম বোমারু মারা গেলো



পল টিবেটস নামের লোকটি আজ মারা গেলো। ৯২ বছর বয়সে। তার যখন ৩০ বছর বয়স তখন সে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে সর্বাধিক মানুষকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কাজে শামিল হয়েছিলো। জাপানের হিরোশিমায় ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট সর্বপ্রথম যে আণবিক বোমা ব্যবহার করা হয়, সেই বোমাবাহী বিমানের চালক ছিলো পল টিবেট। এই বোমায়, আদর করে যেটির নাম দেওয়া হয়েছিলো "ছোট্টো বালক" (লিটল বয়), নিমেষে এক লক্ষ মানুষ পৃথিবী থেকে নেই হয়ে যায়।

আমেরিকান বিমান বাহিনীর সদস্য হিসেবে পল টিবেট তখন আদেশ পালন করেছিলো মাত্র - এইভাবে হয়তো ঘটনাটিকে দেখা চলে। কিন্তু এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে একদিনের জন্যেও কিছুমাত্র অনুতাপ-পরিতাপ তার হয়নি। অথচ তার জবানিতেই জানা যাচ্ছে ধ্বংসের পরিধি কী বিশাল ছিলো। তাকে ব্রিফিং দেওয়া হয়েছিলো এই মর্মে যে, এই বোমাটি বিস্ফোরিত হবে ২০ হাজার টন ডিনামাইটের ধ্বংসক্ষমতা নিয়ে।

পল জানাচ্ছে, "দান্তে সেদিন আমাদের বিমানে থাকলে আতংকিত হতেন। কয়েক মিনিট আগেও সকালের উজ্জ্বল রোদে যে শহরটি দেখিছলাম তা এখন অতি কদর্য একটি দৃশ্যে পরিণত হয়ে গেছে। আগুন আর ধোঁয়ায় আর কিছু দেখা যায় না। সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।"

এতোবড়ো ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেছে জেনেও পল বলেছিলো, সেই রাতে সে খুব ভালো ঘুমিয়েছিলো। ঘটনার পর আরো ৬২ বছর বেঁচে ছিলো সে, তার কখনো অনুতাপ হয়নি।

খবরের কাগজ এবং আলোচনা-প্রতিবাদের শিরোনামে থাকা আমাদের দেশের কোনো কোনো টিবেট-শাবককে কি মনে পড়ে যায় না? এক হিসেবে পল টিবেট এদের পিতৃস্থানীয় তো বটেই!