Sunday, December 30, 2007

ছবিতা (শহীদ কাদরীর কবিতা + কাজী হাসান হাবিবের ছবির যুগলবন্দী)

বৃষ্টি, বৃষ্টি
শহীদ কাদরী

সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো। ঘর-ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে
যারা তন্দ্রালস দিগ্বিদিক ছুটলো, চৌদিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার মত যেন বা মড়কে
শহর উজাড় হবে, – বলে গেল কেউ – শহরের
পরিচিত ঘণ্টা নেড়ে খুব ঠাণ্ডা এক ভয়াল গলায়

এবং হঠাৎ
সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে
বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম!
বজ্র-শিলাসহ বৃষ্টি, বৃষ্টি : শ্রুতিকে বধির ক’রে
গর্জে ওঠে যেন অবিরল করাত-কলের চাকা,
লক্ষ লেদ-মেশিনের আর্ত অফুরন্ত আবর্তন!

নামলো সন্ধ্যার সঙ্গে অপ্রসন্ন বিপন্ন বিদ্যুৎ
মেঘ, জল, হাওয়া, –
হাওয়া, ময়ুরের মতো তার বর্ণালী চিৎকার,
কী বিপদগ্রস্ত ঘর-দোর,
ডানা মেলে দিতে চায় জানালা-কপাট
নড়ে ওঠে টিরোনসিরসের মতন যেন প্রাচীন এ-বাড়ি!
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় জনারণ্য, শহরের জানু
আর চকচকে ঝলমলে বেসামাল এভিনিউ

এই সাঁঝে, প্রলয় হাওয়ার এই সাঁঝে
(হাওয়া যেন ইস্রাফিলের ওঁ)
বৃষ্টি পড়ে মোটরের বনেটে টেরচা,
ভেতরে নিস্তব্ধ যাত্রী, মাথা নীচু
ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে
দ্যাখে, – জল
অবিরল
জল, জল, জল
তীব্র, হিংস্র
খল,
আর ইচ্ছায় কি অনিচ্ছায় শোনে
ক্রন্দন, ক্রন্দন
নিজস্ব হৃৎপিণ্ডে আর অদ্ভুত উড়োনচণ্ডী এই
বর্ষার ঊষর বন্দনায়

রাজত্ব, রাজত্ব শুধু আজ রাতে, রাজপথে-পথে
বাউণ্ডুলে আর লক্ষ্মীছাড়াদের, উন্মূল, উদ্বাস্তু
বালকের, আজীবন ভিক্ষুকের, চোর আর অর্ধ-উন্মাদের
বৃষ্টিতে রাজত্ব আজ। রাজস্ব আদায় করে যারা,
চিরকাল গুণে নিয়ে যায়, তারা সব অসহায়
পালিয়েছে ভয়ে।

বন্দনা ধরেছে, – গান গাইছে সহর্ষে
উৎফুল্ল আৎধার প্রেক্ষাগৃহ আর দেয়ালের মাতাল প্ল্যাকার্ড,
বাৎকা-চোরা টেলিফোন-পোল, দোল খাচ্ছে ওই উৎচু
শিখরে আসীন, উড়ে-আসা বুড়োসুড়ো পুরোন সাইনবোর্ড
তাল দিচ্ছে শহরের বেশুমার খড়খড়ি
কেননা সিপাই, সান্ত্রী আর রাজস্ব আদায়কারী ছিল যারা,
পালিয়েছে ভয়ে।

পালিয়েছে, মহাজ্ঞানী, মহাজন, মোসাহেবসহ
অন্তর্হিত,
বৃষ্টির বিপুল জলে ভ্রমণ-পথের চিহ্ন
ধুয়ে গেছে, মুছে গেছে
কেবল করুণ ক’টা
বিমর্ষ স্মৃতির ভার নিয়ে সহর্ষে সদলবলে
বয়ে চলে জল পৌরসমিতির মিছিলের মতো
নর্দমার ফোয়ারার দিকে, –

ভেসে যায় ঘুঙুরের মতো বেজে সিগারেট-টিন
ভাঙা কাচ, সন্ধ্যার পত্রিকা আর রঙিন বেলুন
মসৃণ সিল্কের স্কার্ফ, ছেঁড়া তার, খাম, নীল চিঠি
লন্ড্রির হলুদ বিল, প্রেসক্রিপশন, শাদা বাক্সে ওষুধের
সৌখীন শার্টের ছিন্ন বোতাম ইত্যাদি সভ্যতার
ভবিতব্যহীন নানাস্মৃতি আর রঙবেরঙের দিনগুলি

এইক্ষণে আঁধার শহরে প্রভু, বর্ষায়, বিদ্যুতে
নগ্নপায়ে ছেৎড়া পাৎলুনে একাকী
হাওয়ায় পালের মতো শার্টের ভেতরে
ঝকঝকে, সদ্য, নতুন নৌকার মতো একমাত্র আমি,
আমার নিঃসঙ্গে তথা বিপর্যস্ত রক্তেমাংসে
নূহের উদ্দাম রাগী গরগরে গলা আত্মা জ্বলে
কিন্তু সাড়া নেই জনপ্রাণীর অথচ
জলোচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসের স্বর, বাতাসে চিৎকার,
কোন আগ্রহে সম্পন্ন হয়ে, কোন শহরের দিকে
জলের আহ্লাদে আমি একা ভেসে যাবো?

পড়ো অথবা পরো

'র' এবং 'ড়' নিয়ে একটা বিভ্রাট আমাদের প্রায়ই ঘটে, বিশেষ করে কথা বলার সময় হয়তো কিছু আলস্যবশেই 'ড়'-কে 'র' উচ্চারণ করে ফেলি। তো এই সত্যিকারের ঘটনাটি 'পরা' আর 'পড়া'-র গোলমাল সংক্রান্ত।

ধরা যাক ছেলেটির নাম অরূপ । তাদের বাড়িতে গ্রাম থেকে এসেছেন এক বয়স্ক আত্মীয়। তার নাম জুবায়ের। জুবায়েরের কীর্তিকলাপে আর ক্রমাগত বকর বকরের ঠেলায় অরূপ ভয়াবহ রকমের বিরক্ত। কিন্তু কিছু করার নেই, মুরুব্বিকে অসম্মান করা যায় না। এই অবস্থায় নিম্নরূপ সংলাপ বিনিময় হচ্ছে:

জুবায়ের: তুমি কী পরো (পড়ো অর্থে)?
অরূপ: জ্বি এই লুঙ্গি পরি, প্যান্ট পরি, পাজামা পরি...
জুবায়ের: না না তুমি কোথায় পরো (পড়ো)?
অরূপ: এই নাভির দুই ইঞ্চি নিচে।
জুবায়ের: তুমি নামাজ পরো (পড়ো) না?
অরূপ: জ্বি না, টাইট হয়!